বাংলাদেশের সাক্ষরতার ইতিহাস বেশ পুরানো। গত শতাব্দীর গোড়া থেকেই এদেশের মানুষের সাক্ষরতা প্রদানের জন্য বিভিন্ন কর্ম্ সূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে টোল-মক্তবের শিক্ষার পাশাপাশি ১৯১৮ সালে নৈশ বিদ্যালয়, ১৯৫৬ সালে সমবায় সমিতির মাধ্যমে নৈশ বিদ্যালয়, ১৯৫৪ সালে মার্কিন সহায়তায় V-AID কর্মসূচি, ১৯৫৬ সালে মি. বিখার নামে এক বিদেশি কর্তৃক ঢাকায় বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু, ১৯৬৩ সালে কুমিল্লা জেলাতে ‘বার্ড্’ কর্তৃক বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু উল্লেখযোগ্য । ব্যাপক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। তাছাড়া কার্যকর সমন্বয়, পযাপ্ত ও পরিকল্পিত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে এ ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারতা লাভ করতে পারেনি।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত জাতির মধ্যে শিক্ষা প্রসারের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষা বিস্তারকে সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেন।সংবিধান অনুযায়ী একই পদ্ধতিতে গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকার অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা দানকরা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
- আশির দশকের শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত এসব উদ্যোগকে সমন্বয়করে নব্বই দশকের শুরু থেকে বয়স্কশিক্ষা সম্বন্ধে জাতীয় পরিচয়ে সতেচন কর্মপ্রয়াসের উম্মেস ঘটে। এর সাথে যুক্ত হয় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ। ১৯৯০ সালের মার্চে থাইল্যান্ডের জমতিয়েনে, ১৯৯৩ সালে দিল্লিতে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ র্শীর্র্ষক সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগদান করে এবং সম্মেলনের ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর ও অঙ্গীকার থেকে দেশে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ আন্দোলন নতুন মাত্রা পেতে থাকে। দেশে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার একটি স্থায়ী অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে ‘সমন্বতি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিতস্তার কার্যক্রম, ১৯৯২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ সৃষ্টি হয়। ইনফেপ প্রকল্পের সফলতার কারণে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা হতে ঝড়ে পড়া ও শিক্ষার সুবিধা বঞ্চিত শিশু , কিশোর ও বয়স্ক নিরক্ষর নারী-পুরুষের সাক্ষরতা সেবা প্রদানের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা একটি কাযর্কর ও যুগোপযোগী পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে এ অভুতপূরব সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার লাভ করে।
- ১৯৯৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ‘ইনফেপ’ কাযালয় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর বা Directorate of Non-Formal Education (DNFE)’ উন্নীত করা হয়। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধীদপ্তরের আওতায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প-১,২,৩ ও ৪ (টিএলএম কাযর্ক্রম ), বাস্তবায়িত হয়। দেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার ক্রমবর্ধমান গুরত্বের বিষয়টি অনুধাবন করে সরকার কর্তৃক ২০০৩ সালের ২ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগকে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ে উন্নীত করা হয়। ইনফেপ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯১ সাল হতে ৩১ অক্টোবর ২০০৩ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৮৩ লক্ষ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করা সম্ভব হয়।
- এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হতে ঝড়ে পড়া ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার নব্য সাক্ষরদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ সাক্ষরতা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য Hard to Reach (HTR) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। অত:পর সরকরার কর্তৃক ১ নভেম্বর ২০০৩ হতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে অকার্যকর করা হয়। ১৭ এপ্রিল ২০০৫ তারিখ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পর ২ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা নীতি জারি করা হয়।আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ধারা প্রচলনের গুরুত্ব দেখা দেওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হতে ঝড়ে পড়া ও শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর ও বয়স্ক নিরক্ষর নারী পুরুষের মৌলিক সাক্ষরতা নিশ্চিত করার লক্ষে বর্তমান সরকার কর্তৃক ১৮ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন পাশ করা হয়। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শীরষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো , উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা নীতি ও আইনের আলোকে দেশ ব্যাপী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কাযর্ক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কারিকুলাম তৈরী , মানযাচাই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সমতুল্লতা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কাজের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়েছে।